নিজস্ব সংবাদদাতা : বন্যায় দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৭ জনে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে বেশি মারা গেছে ফেনীতে ২৬ জন। বন্যায় প্লাবিত উপজেলা ৬৮টি। ক্ষতিগ্রস্ত ৫০৪টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় এখনো পানিবন্দি আছে ৬ লাখ ৫ হাজার ৭৬৭ পরিবার। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫১ লাখ ৮ হাজার ২০২ জন। সার্বিকভাবে দেশের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে লোকজন নিজ নিজ বাড়িঘরে ফিরছেন। তবে এখনো ৩ হাজার ৮৭০টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৩ লাখ ৬ হাজার ৭৪১ জন মানুষ রয়েছেন। একই সঙ্গে ৩২ হাজার ৮৩০টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। বন্যা-পরবর্তী পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব রোধ করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য বলা হয়েছে।
গতকাল সোমবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দেশের চলমান বন্যা সম্পর্কে সর্বশেষ তথ্য জানানো হয়। পরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকেও এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, বন্যা আক্রান্ত ১১টি জেলা হলো, ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার।চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, হবিগঞ্জ সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কক্সবাজার জেলার বন্যা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। মৌলভীবাজার এর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে এবং ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে।
বন্যায় মৃতদের মধ্যে পুরুষ ৪২ জন, নারী সাত জন ও শিশুর সংখ্যা ১৮। কুমিল্লায় মারা গেছেন ১৭ জন, ফেনীতে ২৬ জন, চট্টগ্রামে ছয় জন, খাগড়াছড়িতে এক জন, নোয়াখালীতে ১১ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক জন, লক্ষ্মীপুরে এক জন, কক্সবাজারে তিন জন এবং মৌলভীবাজারে এক জন। মৌলভীবাজারে নিখোঁজ আছেন এক জন। ১১ জেলায় ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে মোট ৪৭২টি মেডিক্যাল টিম চালু রয়েছে। দেশের সব জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী মজুত রয়েছে। বন্যা দুর্গত এলাকায় সরকারি- বেসরকারিসহ সব পর্যায় থেকে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সংগৃহীত মোট ১ লাখ ৭৫ হাজার ৪০০ প্যাকেট শুকনো খাবার, কাপড় ও পানি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের (ডিডিএম) মাধ্যমে বন্যাকবলিত এলাকায় পাঠানো হয়েছে। ডিডিএম ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মধ্যে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শুক্রবার লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলা, শনিবার চট্টগ্রাম জেলার বন্যাকবলিত এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন।উপদেষ্টা রবিবার চট্টগ্রামের মিরেরসরাই উপজেলা এবং ফেনী ও কুমিল্লা জেলার বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন এবং সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বয়ে সভা করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন।
বন্যায় আক্রান্ত জেলার প্রশাসকদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, র্যাব, পুলিশ, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, মেডিক্যাল টিম ও অন্য স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে সমন্বয় করে একসঙ্গে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় জানায়।