সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:২৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
গোপালগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে রুগী সেজে ( দুদক ) এর অভিযান। জাতীয় নির্বাচন কবে, বললেন প্রধান উপদেষ্টা আজ জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। পরিত্যক্ত অবস্থায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পিস্তল উদ্ধার চুয়াডাঙ্গায় ত্রাণের ১৫০টি কম্বলসহ ইউপি চেয়ারম্যান আটক কুটুরিয়া আইডিয়াল মাদরাসায় মক্তবের ছাত্র-ছাত্রীদের ছবক প্রদান ও দোয়ার অনুষ্ঠান ইউপি চেয়ারম্যান – মেম্বরদের মেয়াদ হবে ৩ বছর বাস্তবতা স্বীকার করে সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেন, সাড়ে ৩০০ মতো ইউপিতে দায়িত্বশীল কেউ ছিল না। সেখানে প্রশাসককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কমিটিও গঠন করে দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ বাতিল করার কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। বাতিল করলে গ্রাম পর্যায়ে সেবাপ্রাপ্তিতে ধাক্কা লাগবে। কেননা, একটি গ্রাম নিয়েও ওয়ার্ড গঠিত। সেজন্য ইউপি ভেঙে দিয়ে গ্রাম পর্যায়ে সেবা পৌঁছে দেওয়ায় ব্যাঘাত হোক সেটি চায় না সরকার। তিনি বলেন, আপাতত প্রশাসক পরিচালিত সিটি-পৌরসভা-উপজেলা ও জেলা পরিষদে নির্বাচনের কোনো পরিকল্পনা হয়নি বলেও জানিয়েছেন উপদেষ্টা। তিনি আরও বলেন, জনগণের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে নির্বাচন কখন হবে। নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে আগে। তাছাড়া সংসদ নির্বাচনের আগে কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে কিনা, তা নিয়ে এখনো পরিকল্পনা করেনি অন্তর্বর্তী সরকার। এলজিআরডি উপদেষ্টা বলেন, প্রশাসক পরিচালিত হলেও স্থানীয় সরকারের সেবা নিশ্চিতে কোনো ছাড় দেবে না মন্ত্রণালয়। দুদক চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনারের পদত্যাগ আওয়ামী লীগকে রাজনীতি থেকে বিরত রাখতে রিটের শুনানি হতে পারে আজ

মাদক বহন কারীরা ধরে পড়ে, অধরা থেকে যায় মুল হোতারা

  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন, ২০২৪
  • ৫২ বার পঠিত

নিশান  ডেস্ক: দেশর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ভারত সীমন্তবর্তী জেলা মেহেরপুরে দীর্ঘদিন ধরে মাদক পাচারের বড় রুট বা পথ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব এলাকায় প্রায় সময়ই গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইন ও মদের ছোট-বড় চালান ধরা পড়ে। এসব ঘটনায় শুধু মাদক বহনকারী ইজিবাইকচালক, কিশোর-তরুণ, বেকার যুবকসহ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মানুষ ধরা পড়ে। এর বাইরে বিভিন্ন সময় দরিদ্র মাদকসেবীদের আটক করা হয়। তবে মাদক পাচারের মূল হোতাদের খুঁজে বের করতে পারে না পুলিশ।

মেহেরপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ের তথ্যমতে, র‍্যাব, বিজিবি, পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর মিলে গত তিন মাসে ১ হাজার ২৬০ বোতল ফেনসিডিল, ২৯ কেজি গাঁজা, ২২০ গ্রাম হেরোইন, ৫৮৩টি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। মাদক–সংশ্লিষ্ট মামলা হয়েছে ১১৬টি। এসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় ১৩৭ জন মাদক বহনকারীকে।
মাদক পাচার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যে পরিমাণ মাদক ধরা পড়ছে, তার কয়েক গুণ বেশি মাদক দেশে প্রবেশ করছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পাচারকারীরা মাদক বহনে শিশু-কিশোরদের ব্যবহার করছে। আইনে তাদের লঘু সাজার কথা বলা হয়েছে। এর বাইরে মাদক পাচারকারী চক্রের হোতারা রয়ে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

এই পরিস্থিতিতে আজ ২৬ জুন জাতিসংঘ ঘোষিত ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস’ পালিত হচ্ছে। ২০১৯ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসাবে, সরকারের বিভিন্ন সংস্থার অভিযানে ৫ কোটি ৩০ লাখ ইয়াবা এবং সাড়ে ১১ মণ হেরোইন উদ্ধার করা হয়েছিল। এই পরিমাণ আগের বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। খোদ জাতিসংঘের মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ইউএনওডিসির বাংলাদেশে পরিচালিত গবেষণার তথ্যমতে, দেশে যত মাদক বিক্রি হয়, ধরা পড়ে তার মাত্র ১০ শতাংশ।

ধরা পড়ে কারা, শাস্তি হয় কাদের
২০১৮ সালে ৪ সেপ্টেম্বর মেহেরপুর সদর উপজেলার বামনপাড়া এলাকায় সবজিবোঝাই একটি ট্রাক থেকে ৮০০ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করা হয়। ট্রাকচালকের সহকারী এক কিশোরকে আটক করা হয়। ওই সময় ওই কিশোরের বয়স ছিল ১৩ বছর। এ ঘটনায় আদালতে ওই কিশোরের বিচার হয়। তাকে সংশোধনাগারে পাঠানো হয়। ওই ঘটনায় পুলিশ ফেনসিডিল পাচারের মূল হোতাকে খুঁজে বের করতে পারেনি।
সদর থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ দারা খান দৈনিক নিশান কে জানান, মেহেরপুর জেলায় শিশু-কিশোরদের দিয়ে মাদকের বড় চালান পাচার করা হয়। এ ক্ষেত্রে তদন্তের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করার সুযোগ পাওয়া যায় না। এ কারণে মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যায়।

জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি পল্লব ভট্টাচার্য দৈনিক নিশান কে  বলেন, আদালতের মাদক মামলায় যত আসামি গ্রেপ্তার হয়ে আসে, তাদের বেশির ভাগ মাদকসেবী। বড় মাদক পাচারকারীদের আটক হতে দেখা যায় না। মাদকের থাবা পরিবার ও সমাজে

মাদকসেবী ছেলের কারণে গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের কৃষক তাজুল ইসলামের সংসার এখন ছিন্নভিন্ন। তাঁর ছেলে বেল্টু মিয়া (৩৪) মাদকের নেশায় পড়ে বাড়িতে নিয়মিত অশান্তি করতেন। প্রথম দিকে বাড়ির জিনিসপত্র চুরি করে মাদকের টাকা সংগ্রহ করতেন। পরে প্রতিবেশীদের বাড়িতে চুরি শুরু করেন। পরিবার ও নিকটাত্মীয়রা তাঁকে মাদক সেবন থেকে সরে আসতে চাপাচাপি করতে থাকেন। মাদক সেবন নিয়েই সম্প্রতি চাচাতো ভাই ফজলুর রহমানের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা বাধে বেল্টুর। একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে হাঁসুয়া দিয়ে ফজলুরকে কুপিয়ে পালিয়ে যান বেল্টু।

ছোট একটি গ্রাম গাংনীর কাথুলী। গ্রামের কয়েক শ শিশু-কিশোর, যুবক, প্রবীণ এখন মাদকের ভয়াল গ্রাসে আচ্ছন্ন। সন্ধ্যা হলেই মাদকসেবীদের আনাগোনা বাড়ে গ্রামের বাজারগুলো, ফলের বাগান ও নদীর ধারে। কথা হয় মাদকাসক্ত কিশোর মানিকের (ছদ্মনাম) সঙ্গে। বয়স মাত্র ১৩ বছর। সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। জানতে চাইলে ওই কিশোর বলে , গ্রামের বাজারে সন্ধ্যার পর অর্ধশতাধিক যুবক প্রতিদিন মাদক সেবন করে। এলাকায় একজনের বাড়ি থেকে ১০০ গ্রাম গাঁজা ৫০০ টাকায় আনতে হয়। পরে পাঁচ-ছয়জন মিলে গাঁজা প্রক্রিয়াজাত করে সেবন করে।

মাদক ব্যবসায় রমরমা
একাধিক মাদক বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একসময় নগদ টাকা দিয়ে ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে মাদক কিনে আনতেন। বর্তমানে স্বর্ণের বার ওপারে পাচারের বদলে এপারে আসে মাদক। মাদকের ব্যবসা হচ্ছে তিনটি ধাপে। একটি দল সীমান্ত পাড়ি দিয়ে মাদক নিয়ে আসে। তারা পৌঁছে দেয় মেহেরপুরের এজেন্টদের কাছে। এজেন্টরা বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে খুচরা বিক্রেতাদের দিয়ে এসব মাদক বিক্রি করায়। দরিদ্র পরিবারের নারী ও শিশুদের মাদক বিক্রি, পরিবহন ও খুচরা বিক্রির কাজে ব্যবহার করছেন নেপথ্যের হোতারা। তারা থেকে যাচ্ছে আইনের নাগালের বাইরে।

সম্প্রতি মাদক মামলায় জামিন নিয়ে জেল থেকে বের হয়েছেন গাংনী উপজেলার মাদকের খুচরা বিক্রেতা নিলয় শেখ (ছদ্মনাম)। তিনি  দৈনিক নিশান কে  বলেন, জেলার বড় মাদক ব্যবসায়ীদের দুজন সদর উপজেলার জনপ্রতিনিধি।

এখন আর টাকা দিয়ে মাদক কিনতে হয় না। এর পরিবর্তে ঢাকা থেকে আসে স্বর্ণের বার। বাংলাদেশ থেকে সীমান্তের কাঁটাতারের ওপারে স্বর্ণের বার নিক্ষেপ করা হয়। আগে থেকে মুঠোফোনে মাদক ও স্বর্ণের চালানের বিষয়ে আলোচনা করা থাকে। স্বর্ণের বার ফেলার সঙ্গে সঙ্গে কালো টেপ দিয়ে মোড়ানো মাদক এপারে ফেলে দেওয়া হয়। সেগুলো সংগ্রহ করে গ্রামের একাধিক বাড়িতে মজুত রাখতে হয়। পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখে–বুঝে মাদকের চালান, শ্যালো ইঞ্জিনচালিত বালুবোঝাই ট্রলার, সবজিবোঝাই আলগামন (তিন চাকার যান), মোটরসাইকেল, বোরকা পরিহিত নারীসহ নানা মাধ্যমে ছোট ছোট করে মাদক বড় শহরগুলোতে পাঠানো হয়।

অন্যদিকে শোভরাজপুর গ্রামের ওই মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি যুবক কাজ করেন। খুব দ্রুত ওই ব্যক্তি মাদক ব্যবসায় ফুলেফেঁপে উঠেছেন। সম্প্রতি মেহেরপুর পৌর শহরে একটি তিনতলা রাজকীয় বাড়ি তৈরি করেছেন। এর পরেই অনেকে তাঁর মাদক ব্যবসা সম্পর্কে জানতে পারেন। তবে দিনের বেশির ভাগ সময় গ্রামের বাড়ি শোলমারিতে থাকেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে শোভরাজপুর গ্রামের কয়েকজন বলেন, ওই ব্যক্তি আগে দিনমজুরি করতেন। মাদক ব্যবসা করে এখন তিনি গাড়ি-বাড়ি তৈরি করে ফেলেছেন। পুলিশও তাঁর কাছে নস্যি।

পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে দেওয়া তথ্যমতে, গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর মেহেরপুর সদর থানা-পুলিশ পৌর শহর থেকে ছয়টি সোনার বারসহ দুজনকে আটক করে। পরে পুলিশ রিমান্ডে তাঁদের কাছ থেকে জানতে পারে, সোনার বারগুলো যাচ্ছিল শোভরাজপুর গ্রামের ওই মাদক ব্যবসায়ীর কাছে। পরে তাঁর নামে সোনা পাচারের মামলা দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন।

এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক আবুল হাশেম বলেন, মাদক নির্মূলে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হয়; কিন্তু বড় মাদক ব্যবসায়ীদের ধরা সম্ভব হয় না। যাঁরা গ্রেপ্তার হন, তাঁদের কাছ থেকে পুলিশ তথ্য নিয়ে হোতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।

 

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও সংবাদ

বাস্তবতা স্বীকার করে সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেন, সাড়ে ৩০০ মতো ইউপিতে দায়িত্বশীল কেউ ছিল না। সেখানে প্রশাসককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কমিটিও গঠন করে দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ বাতিল করার কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। বাতিল করলে গ্রাম পর্যায়ে সেবাপ্রাপ্তিতে ধাক্কা লাগবে। কেননা, একটি গ্রাম নিয়েও ওয়ার্ড গঠিত। সেজন্য ইউপি ভেঙে দিয়ে গ্রাম পর্যায়ে সেবা পৌঁছে দেওয়ায় ব্যাঘাত হোক সেটি চায় না সরকার। তিনি বলেন, আপাতত প্রশাসক পরিচালিত সিটি-পৌরসভা-উপজেলা ও জেলা পরিষদে নির্বাচনের কোনো পরিকল্পনা হয়নি বলেও জানিয়েছেন উপদেষ্টা। তিনি আরও বলেন, জনগণের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে নির্বাচন কখন হবে। নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে আগে। তাছাড়া সংসদ নির্বাচনের আগে কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে কিনা, তা নিয়ে এখনো পরিকল্পনা করেনি অন্তর্বর্তী সরকার। এলজিআরডি উপদেষ্টা বলেন, প্রশাসক পরিচালিত হলেও স্থানীয় সরকারের সেবা নিশ্চিতে কোনো ছাড় দেবে না মন্ত্রণালয়।